ইসলামের আলো

ইসলাম মানুষের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ জীবনে সৌন্দর্যচর্চা এবং সর্বাবস্থায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর অটল থাকার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে। অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপনে অভ্যস্ত ব্যক্তির জীবনধারণের অনাকাঙ্ক্ষিত এ অসুন্দর অভ্যাসকে কেউই সৌন্দর্য বা রুচিবোধ বলবে না। সবাই এ রকম লোকদের ভর্ৎসনা করবে, ঘৃণা করবে, উপেক্ষা করবে। তাওবা অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে আর পবিত্রতা ব্যক্তির বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, মানুষকে দেহমনে পরিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন করে সর্বোপরি ব্যক্তিকে আল্লাহর পরম প্রিয় করে তোলে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকেন তাহাদেরও ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা: ২২২)। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘আল্লাহ সুন্দর। তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন।’ (মুসলিম: ৯১)।

মানুষের আচার-ব্যবহার, চালচলনে, কথাবার্তায় সৌন্দর্য ও রুচিবোধ ফুটে ওঠে। মানুষের অভ্যন্তরীণ অন্তরাত্মা ও দৃষ্টিভঙ্গি যদি সুন্দর বা পরিচ্ছন্ন বা রুচিকর না হয়, তাহলে বাহ্যিক সৌন্দর্য মূল্যহীন হয়ে পড়ে। একজন দেহাবয়বে সুন্দর ব্যক্তির মন-মানসিকতা যদি নিচু হয়, তার কথাবার্তা যদি কর্কশ হয়, তার আচরণ যদি হিংস্র কিংবা নিকৃষ্ট পশুর আচরণের মতো হয়, যদি তার মধ্যে মানবীয় আচার-আচরণের বিপরীতে দানবীয় আচার-আচরণ প্রকাশ পায়, পোশাক-পরিচ্ছেদে নোংরামি প্রকাশ পায়, খাবার-দাবার গ্রহণেও অভদ্রতা প্রকাশ পায়; তাহলে সুন্দর দেহ কিংবা সুন্দর চেহারার মানুষের এ রকম রুচিকে কেউই সুরুচি বলবে না। বরং এসব একবারেই দৃষ্টিকটু অসুন্দর ও অরুচিকর। ইসলাম এসব বিষয়ে তার সব অনুসারীকে সতর্ক করে নির্দেশনা দিয়েছে।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দশটি বিষয় স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো হলো—গোঁফ খাটো করা, দাড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দেওয়া, নখ কাটা, অঙ্গের গিরাসমূহ ঘষেমেজে ধৌত করা, বগলের পশম উপড়িয়ে ফেলা, নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করা, মলমূত্র ত্যাগের পর পানি ব্যবহার করা। জাকারিয়া বলেন, মাসআব (রা.) বলেছেন, আমি দশ নম্বরটি ভুলে গেছি। সম্ভবত তা হলো কুলি করা।’ (মুসলিম: ২৬১)। এ দশটি স্বভাবগুণ মানুষের সৌন্দর্য ও রুচিবোধেরও অন্যতম নিয়ামক।

ইসলাম ব্যক্তির বাহ্যিক পোশাক পরিচ্ছদে সৌন্দর্য প্রকাশ ও রুচির সমন্বয়কে দারুণভাবে উৎসাহ প্রদান করেছে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবজাতি! আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, তোমাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করা দোষণীয়, তা ঢাকার জন্য এবং তা সৌন্দর্যেরও উপকরণ। বস্তুত তাকওয়ার যে পোশাক সেটাই সর্বোত্তম। এসব আল্লাহর নির্দেশনাবলির অন্যতম, যাতে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা আরাফ: ২৬)। নারী-পুরুষের পোশাক-পরিচ্ছদের সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান রয়েছে, সে মোতাবেক নারী-পুরুষের পোশাক ও পরিচ্ছেদের মাধ্যমে রুচিবোধ ও সৌন্দর্য প্রকাশ করা। তবে পোশাকের মাধ্যমে আভিজাত্য প্রকাশের নামে অশ্লীলতার প্রচার-প্রসার কিংবা অপচয় করা কিংবা অহংকার প্রদর্শন করা—এসব কিছুকে ইসলাম হারাম তথা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে।

মুফতি আতিকুল্লাহ আসাদ

Suleman Miah দ্বারা

সম্পর্কিত পোস্ট

bn_BD