তাওবার মাধ্যমে ফিরে আসা

বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর দয়া-মায়া, করুণা অনন্ত অসীম। আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেছেন, নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতিশয় দয়ালু। আল্লাহর করুণা ও দয়া লাভের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে তাওবা। ‘তাওবা’ শব্দের অর্থ হলো ফিরে আসা। যখন তাওবা শব্দটির সম্পর্ক মানুষের সঙ্গে হয় তখন তার তাৎপর্য দাঁড়ায়, বান্দার কৃত অন্যায়ের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া; সে অন্যায় সম্পূর্ণরূপে বর্জন করা; ভবিষ্যতে এমন অন্যায় না করার দৃঢ়সংকল্প করা। এমন দৃঢ়সংকল্প করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার নামই তাওবা।

তাওবার গুরুত্ব বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা সুরা হুদের ৯০ আয়াতে এরশাদ করেন– আর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার নিকট ক্ষমা চাও, অতঃপর তাঁরই দিকে ফিরে এসো। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক অত্যন্ত মেহেরবান ও অতি দয়াময়।

আল্লাহ তায়ালা ইমানদারদের উভয় জগতের সফলতা অর্জনের জন্য তাওবার নির্দেশ দিয়ে সুরা নূরের ৩১ আয়াতে এরশাদ করেন– হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। সুরা তাহরিমের ৮ আয়াতে এরশাদ করেন– হে ইমানদারগণ! আল্লাহর কাছে তাওবা করো; খাঁটি তাওবা।
মহান আল্লাহ শিখিয়েছেন– হে আমাদের রব, আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন তবে অবশ্যই আমরা ধ্বংস হয়ে যাব। (সুরা আল-আ’রাফ: আয়াত ২৪); হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা ইমান এনেছি, কাজেই আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিন আর আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। (সুরা আল ইমরান: আয়াত ১৬); হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিন এবং দোষত্রুটি দূর করে দিন। আমাদের নেক্কার বান্দাদের সঙ্গে মৃত্যু দিন। (সুরা আল ইমরান: আয়াত ১৯৩) 

তাওবার মাধ্যমে অফুরন্ত সুখ অর্জিত হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা তাওবাকারীদের ভালোবাসেন। তিনি তাওবাকারীদের অফুরন্ত সুখ-সম্ভোগ দান করেন। যেমন– আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের সুরা হুদের ৩ আয়াতে এরশাদ করেন– আর যদি তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর; অতঃপর তাঁরই নিকট তাওবা কর, তাহলে তিনি তোমাদের অতি উত্তম সামগ্রী উপভোগ করতে দেবেন। 
আল্লাহ তায়ালা তাওবাকারী বান্দার পাপ কর্মকে নেকিতে পরিবর্তন করে দেন। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনের সুরা ফুরকানের ৭০ আয়াতে এরশাদ হয়েছে– কিন্তু যারা তাওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎ কর্ম করে আল্লাহ তায়ালা তাদের পাপকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করেন। হাদিসে শরিফে বর্ণিত– রাসুলে কারিম (সা.) এরশাদ করেন, তাওবাকারী ওই ব্যক্তির ন্যায়, যার কোনো গুনাহ নেই। (সুনানে বায়হাকি)
হাদিসে বর্ণিত, হজরত আলি (রা.)-কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেছিল এমন একজন ব্যক্তি সম্পর্কে, যে গুনাহ করে তাওবা করে; পুনরায় গুনাহ করে। আবার তাওবা করে আবার গুনাহ করে। আবার গুনাহর কাজে মশগুল হয় এবং আবার তাওবা-ইস্তিগফার করে। এ রূপ করতে থাকা ব্যক্তির কী অবস্থা হবে? হজরত আলি (রা.) বলেছেন, তার কর্তব্য হলো সর্বদা তাওবা-ইস্তিগফার করতে থাকা। কেননা, তাওবা-ইস্তিগফার অব্যাহত থাকলে শয়তান ব্যর্থ হয়ে যাবে। শয়তান বলবে, এ ব্যক্তিকে গুনাহর কাজে সর্বদা মশগুল রাখতে আমি অক্ষম। অপর হাদিসে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) এরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে তাওবা করতে থাকো। কেননা, আমি নিজে দৈনিক ১০০ বার তাওবা করি।’ (মুসলিম)
পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদয়ের পূর্ব পর্যন্ত সবার জন্য তাওবার দরজা খোলা থাকবে। হাদিস শরিফে বর্ণিত, একজন মুমিন যতক্ষণ পর্যন্ত মৃত্যুর গরগর শব্দ না করে ততক্ষণ আল্লাহ তায়ালা তাওবা কবুল করেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে খাঁটি তাওবা করে তাঁর প্রিয় বান্দা হওয়ার তৌফিক দান করুন।

Suleman Miah দ্বারা

সম্পর্কিত পোস্ট

bn_BD