বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইন থাকা সত্ত্বেও এবং দেশজুড়ে এই প্রথা প্রতিরোধে অনেক সচেতনতামূলক প্রচারণা এবং চলমান প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, কঠোর বাস্তবতা হল বাল্যবিবাহ একটি অভিশাপ যা এখনও অবিচল। চরের মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানে জীবন বিশেষভাবে কঠিন, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। শনিবার এই পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বরিশালের রসুলপুর চরে শত শত বাল্যবধূর ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দারিদ্র্য এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে এখানকার অভিভাবকরা তাদের নাবালিকা কন্যাদের বিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
বলা বাহুল্য, দারিদ্র্য সবসময়ই বাল্যবিবাহের পেছনে একটি প্রধান কারণ ছিল, যা মহামারীর সময় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল কিন্তু পরবর্তী বছরগুলিতেও তা অব্যাহত ছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুসারে, ১৮ বছর বয়সের আগেই ৪১.৬ শতাংশ তরুণীর বিয়ে হয়ে যায়। এর ফলে অনেক মেয়ে মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়, যা তাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলে। যৌন সহিংসতা এবং হয়রানির বৃদ্ধিও এই মন্দ কাজের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
রসুলপুরে, ১৩-১৫ বছর বয়সী মেয়েদের প্রায়শই বিয়ে দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে খুব কম বয়সে সন্তান ধারণ, যার ফলে নানা ধরণের স্বাস্থ্যগত জটিলতা দেখা দেয়। এখানে কোনও ডাক্তার বা কমিউনিটি ক্লিনিক নেই, এবং অনেক বিবাহিত মেয়ের গর্ভাবস্থাজনিত জটিলতা দেখা দেয় যা তাদের অযত্নেই ছেড়ে দেওয়া হয়। চরটি একটি প্রধান মাদকের কেন্দ্রস্থল হিসেবেও কুখ্যাত, যেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এবং পুলিশের কিছু সদস্য জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই, অল্পবয়সী মেয়েদের নিরাপত্তা একটি বড় সমস্যা যা এত বাল্যবিবাহের দিকে পরিচালিত করে।
দরিদ্র পরিবার এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের কল্যাণের প্রতি স্থানীয় প্রশাসনের চরম অবহেলার এক স্পষ্ট উদাহরণ হল রসুলপুর। এখানে তরুণদের জন্য কোনও স্বাস্থ্যকর বিনোদনের বিকল্প নেই এবং শিক্ষার সুযোগ খুব কম। পরিবর্তে, মাদক ব্যবসা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর সাথে অপরাধ, আসক্তি এবং নিরাপত্তাহীনতার ঢেউ বয়ে আনছে। স্থানীয়দের এই চ্যালেঞ্জগুলি নিজেরাই মোকাবেলা করতে হচ্ছে এবং কোনও উপায় না পেয়ে তাদের মেয়েদের রক্ষা করার জন্য তাদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।