বিচারে ইনসাফ ও ন্যায়নিষ্ঠতা

সমাজ ও দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ইনসাফ ও ন্যায়বিচারের বিকল্প নেই। বিশ্বজুড়ে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মূল কারণ হচ্ছে ন্যায়বিচারের অভাব। ইসলামে ন্যায়বিচারের উদ্দেশ্যই হলো প্রত্যেককে তার অধিকার পরিপূর্ণভাবে দিয়ে দেওয়া। সব মানুষই যদি তার প্রাপ্য অংশ পায়, তাহলে সেখানে কোনো হানাহানি ও অশান্তি থাকে না।

আল্লাহতায়ালা সবচেয়ে বড় ন্যায়বিচারক। ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা যেহেতু আল্লাহরই কাজ, তাই শাসনকাজে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট সবাইকে আল্লাহপাক এ নির্দেশই প্রদান করেন, তারা যেন সমাজ ও দেশের সর্বত্র ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যদি নিজ পিতা-মাতার বিরুদ্ধেও সাক্ষ্য দিতে হয় তা যেন দেওয়া হয়। 

পবিত্র কোরআনের সুরা আন নিসার ৩৫ আয়াতে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘হে যারা ইমান এনেছ! আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সাক্ষ্যদাতা হিসেবে তোমরা দৃঢ়ভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী হও, এমনকি সেই সাক্ষ্য তোমাদের নিজেদের বা পিতামাতার অথবা নিকটাত্মীয়দের বিরুদ্ধে গেলেও। যার সম্পর্কে সাক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে, সে ধনী হোক বা গরিব, আল্লাহ উভয়েরই সর্বোত্তম অভিভাবক। অতএব, তোমরা যাতে ন্যায়বিচার করতে সক্ষম হও, সেজন্য তোমরা কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করো না আর তোমরা যদি পেঁচানো কথা বলো অথবা সত্য এড়িয়ে যাও, তবে মনে রেখ, তোমরা যা কর সে বিষয়ে নিশ্চয় আল্লাহ পুরোপুরি অবগত আছেন।’ 

এ আয়াতে শুধু সুবিচারের কথাই বলা হয়নি, বরং সুবিচার প্রতিষ্ঠার শর্তাবলিও উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, শুধু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই নয়, বরং ন্যায়বিচারের পতাকাকেও সমুন্নত রাখতে হবে। যেখানেই ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হবে, সেখানেই তা প্রতিষ্ঠিত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। 

কোনো পক্ষের হারজিতের জন্য সাক্ষ্য নয়, বরং একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যই সাক্ষ্য দিতে হবে। কেননা, সত্য সাক্ষ্য ব্যতিরেকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সত্য সাক্ষ্য দিতে গিয়ে যদি নিজেদের স্বার্থে আঘাত লাগে অথবা নিজ পিতা-মাতার বা নিকটাত্মীয় পরিজনের বিরুদ্ধেও যায়, তবুও সত্য সাক্ষ্য দিতে হবে। ন্যায়বিচারের উচ্চ মানদণ্ড ছাড়া সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সত্যকেই মাধ্যম বানাতে হবে।
অন্যত্র সুরা আল মায়েদার ৮ আয়াতে আল্লাহতায়ালা আরও এরশাদ করেন, ‘হে যারা ইমান এনেছ! আল্লাহর উদ্দেশে তোমরা ন্যায়ের পক্ষে সাক্ষী হিসেবে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হও আর কোনো জাতির প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদের অবিচার করতে প্ররোচিত না করে। তোমরা সদা ন্যায়বিচার করো। এটি তাকওয়ার সবচেয়ে নিকটবর্তী। আর তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো। তোমরা যা কিছু কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে পুরোপুরি অবগত আছেন (সুরা মায়েদা: ৮)।’
ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো সমাজের সর্বত্র ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা। মহান আল্লাহর তরফ থেকে পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত নবী ও রাসুল আগমন করেছেন, তাদের প্রত্যেকের প্রধান দায়িত্ব ছিল সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।

আল্লাহতায়ালার নির্দেশ অনুযায়ী সব নবী-রাসুল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করেছেন এবং এ ক্ষেত্রে সফলও হয়েছেন। 
পবিত্র কোরআনের সুরা হুজুরাতের ৯ আয়াতে আল্লাহতায়ালা আরও ইরশাদ করেন, ‘আর মুমিনদের দু’দল যুদ্ধে লিপ্ত হলে তাদের মাঝে তোমরা মীমাংসা করে দিও। এরপর তাদের মাঝে একদল অন্য দলের বিরুদ্ধে সীমা লঙ্ঘন করলে যে দল সীমা লঙ্ঘন করে, তারা আল্লাহর সিদ্ধান্তের দিকে ফিরে না আসা পর্যন্ত তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। এরপর তারা আল্লাহর সিদ্ধান্তের দিকে ফিরে এলে তোমরা উভয়ের মাঝে ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে মীমাংসা করে দিও এবং ন্যায়বিচার করো। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালোবাসেন’ 
বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর নির্দেশ হলো– ‘তুমি নিজের জন্য যা পছন্দ কর, অন্য সবার জন্যও তা পছন্দ কর’। আমরা যদি এই হাদিসের ওপর আমল করি, তাহলেই কেবল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আমরা নিজের অধিকার পুরোপুরি আদায়ের ক্ষেত্রে বদ্ধ পরিকর, অথচ অন্যের অধিকারের বিষয়ে সামান্যতম চিন্তাও করি না। এটা কখনও মুসলিমের কাজ হতে পারে না।

By Suleman Miah

Related Posts

en_US